গলদা চিংড়ির বাহিক্য গঠন ও অভ্যন্তরীণ অংগসমূহ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | | NCTB BOOK

গলদা চিংড়ি একটি অমেরুদন্ডী প্রাণী। এদের দেহ শক্ত কাইটিনের আবরণে ঢাকা, যাকে বহিঃকঙ্কাল বলে। গলদা চিংড়ির দেহ মুলত দুইটি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশ শিরোবক্ষ (Cephalothorax) শির বা মাথা এবং বক্ষাঞ্চল বা Thorax এর সমন্বয়ে গঠিত। দ্বিতীয় অংশ উদারাঞ্চল বা Abdomen । শিরোবক্ষ অঞ্চলটি একটি শক্ত আবরণ বা ক্যারাপেস দ্বারা ঢাকা থাকে।

গলদা চিংড়ির দেহে মোট ১৯টি খন্ড রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি খন্ড মস্তক অঞ্চলে, ৮টি বক্ষাঞ্চলে ও ৬টি উদরাঞ্চলে অবস্থিত। ভ্রূণ অবস্থায় এর দেহে ২০টি খন্ড থাকে। এর মধ্যে ১ম খন্ডটি পরবর্তীতে দুদিকে চক্ষুবৃন্ত গঠন করে বিধায় ভ্রূণ পরবর্তী অবস্থায় ১৯টি খন্ড দৃশ্যমান থাকে। গলদা চিংড়ির মাথা ও বুককে এক সঙ্গে শিরোবক্ষ বা সেফালোথোরোক্স বলা হয়।

শিরোবক্ষের পিছনেই উদর অবস্থিত। উদর ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে টেলসন বা লেজে শেষ হয়েছে। টেলসনের উভয় পার্শ্বে পুচ্ছ পাখনা বা ইউরোপড (Uropod) অবস্থিত। চিংড়ির বহিরাবরণ কাইটিন নামক খোলস দিয়ে আবৃত যা ক্যালশিয়াম উপাদান দিয়ে গঠিত। এই খোলসগুলো চিংড়ির দেহের প্রতিটি অংশকে ঢেকে রাখে এবং একটি খোলস অপর খোলসের সঙ্গে একটি সন্ধিল পর্দা (Arthrodial membrane) দিয়ে সংযোগ রক্ষা করে। ফলে খোলসগুলো সহজেই প্রয়োজনে সম্প্রসারিত ও সংকুচিত হতে পারে। চিংড়ির খোলসের অনেকগুলো স্তর আছে। একেবারে উপরের স্তরটি শক্ত ও কোষবিহীন। শক্ত স্তরের নিচে একপ্রস্থ কোষ অবস্থিত। কোষের স্তরে রসগ্রন্থি বিদ্যমান। স্কেলেরাইট (Sclerite) দ্বারা চিংড়ির প্রতিটি দেহখন্ড আবৃত থাকে। উদরে প্রধাণত দু'টি স্কেলেরাইট অবস্থিত; পৃষ্টদেশে অবস্থিত ছোট খন্ডটিকে প্লিউরন (Pleuron) বলা হয়।

চিত্র-১.১: গলদা চিংড়ির বাহিক্য গঠন

চিংড়ির শিরোবক্ষ পৃষ্ঠাদেশাবরণ (Dorsal shield) বা শিরোবর্ম দ্বারা ঢাকা থাকে যা ক্যারাপেস (Carapace) নামে পরিচিত। পৃষ্টদেশের আবরণ উভয় পার্শ্ব হতে নিচের দিকে সম্প্রসারিত হয়ে ফুলকার উভয় দিকে একটি আবরণের সৃষ্টি করে। এই আবরণকে ব্রঙ্কিওস্টেগাইট (Branchiostegite) বলা হয়। এই আবরণ চিংড়ির শ্বাসঅঙ্গ বা ফুলকাকে রক্ষা করে। পৃষ্টদেশের আবরণ হতে মধ্যরেখা বরাবর একটি অংশ সামনের দিকে ক্রমশ লম্বা হয়ে পার্শ্ব চাপা ও ঊর্ধ্বমুখী সরু করাতের মতো সম্প্রসারিত হয়েছে যা রোস্টাম (Rostrum) নামে পরিচিত। এই রোস্টাম ক্যারাপেসের সম্মুখভাগে অবস্থিত। উপরের ও নিচের কিনারায় খাঁজ কাটা থাকে।

চিংড়ি রোগ্রামের সাহায্যে শত্রুর হাত থেকে আত্মরক্ষা করে থাকে। রোষ্ট্রামের গোড়ার উভয় পার্শ্বে ছোট দুইটি কণ্টক থাকে। সামনের কণ্টকটিকে অ্যান্টেনাল কণ্টক (Antennal spine) ও পিছনের কণ্টকটিকে যকৃৎ কণ্টক (Hepatic spine) বলা হয়। রোট্রামের গোড়ার উভয়দিকে একটি করে সবৃন্তক পুঞ্জাক্ষি (Stalked compound eye) অবস্থিত। বৃত্তের সাহায্যে চিংড়ি পুঞ্জাক্ষিকে চারিদিকে ঘুরাতে সক্ষম হয়। শিরোবক্ষের অম্লীয়দেশের অগ্রভাগে ছোট মুখ অবস্থিত। মুখের সামনের উপরের অংশকে লেগ্রাম (Labrum) বা উর্ধ্বোষ্ট ও নিচের অংশকে লেবিয়াম (Labium) বা নিম্নোষ্ঠ বলে। চিংড়ির লেজের অঙ্কীয়দেশে পায়ু অবস্থিত। চিংড়ির উপরের পঞ্চম উপাঙ্গের গোড়ার ভেতরের দিকে পুরুষ চিংড়ির জনন রন্ধ্র এবং তৃতীয় উপাঙ্গের ঠিক একই স্থানে স্ত্রী চিংড়ির জনন রন্ধ উন্মুক্ত হয়।

চিত্র-১.২: গলদা চিংড়ির রোট্রাম ও মাথার বিভিন্ন উপাঙ্গ  

Content added By
Promotion